Monday, April 1, 2024

ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি - Classical Economics

ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি, প্রাথমিকভাবে ব্রিটেনে ১৮ শতকের শেষের দিকে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে বিকশিত হয়েছিল। এর প্রধান চিন্তাবিদরা হলেন 

অ্যাডাম স্মিথ,
জঁ-ব্যাপটিস্ট সে,
ডেভিড রিকার্ডো,
থমাস রবার্ট ম্যালথাস
এবং জন স্টুয়ার্ট মিল।
 
এই অর্থনীতিবিদরা মূলত স্ব-নিয়ন্ত্রক সিস্টেম হিসাবে বাজার অর্থনীতির একটি তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন, যা উৎপাদন ও বিনিময়ের প্রাকৃতিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয় (বিখ্যাতভাবে অ্যাডাম স্মিথের অদৃশ্য হাতের রূপক দ্বারা ধরা পড়ে)।


১৭৭৬ সালে অ্যাডাম স্মিথের দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস সাধারণত ক্লাসিক্যাল অর্থনীতির সূচনা হিসাবে বিবেচিত হয়। স্মিথের বইয়ে মৌলিক বার্তা ছিল যে, যে কোন জাতির সম্পদ রাজার কোষাগারের স্বর্ণ দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং তার জাতীয় আয় দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই আয়টি তার অধিবাসীদের শ্রমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, শ্রম বিভাজন এবং সঞ্চিত মূলধনের ব্যবহার দ্বারা দক্ষতার সাথে সংগঠিত হয়েছিল, যা ক্লাসিক্যাল অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ধারণাগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে, ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা বাস্তববাদী উদারপন্থী ছিলেন, বাজারের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন, যদিও তারা সাধারণ ভালর জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা দেখেছিলেন। স্মিথ স্বীকার করেছেন যে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে বাজারটি সাধারণ স্বার্থকে পরিবেশন করার সর্বোত্তম উপায় নয়, এবং তিনি এটি একটি প্রদত্ত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন যে সাধারণ ভালকে সমর্থন করে এমন ব্যয়ের বৃহত্তর অনুপাতটি তাদের সামর্থ্যের জন্য সর্বোত্তমভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের দ্বারা বহন করা উচিত। তিনি একাধিপত্যের বিপদ সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছিলেন এবং প্রতিযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থক ছিলেন, যা তাদের বাণিজ্যিক পূর্বসূরীদের থেকে তাদের আলাদা করে, যারা সংরক্ষণবাদের পক্ষে ছিলেন।


স্মিথ, রিকার্ডো এবং কিছু পূর্ববর্তী অর্থনীতিবিদকে "ক্লাসিক্যাল" হিসাবে উপাধিটি একটি অনুশাসনের কারণে যা কার্ল মার্কসের রাজনৈতিক অর্থনীতির সমালোচনা থেকে উদ্ভূত হয়, যেখানে তিনি তাদের "অশ্লীল" উত্তরাধিকারীদের বিপরীতে কমপক্ষে তাদের সাথে মোকাবিলা করার যোগ্য বলে মনে করেন এমন সমালোচনা করেছিলেন। ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি শব্দটি দ্বারা আচ্ছাদিত কী তা নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে, বিশেষত যখন ১৮৩০ থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত সময়কাল এবং শাস্ত্রীয় অর্থনীতি কীভাবে নব্যতাত্ত্বিক অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত।






 অ্যাডাম স্মিথ: অর্থনীতির জনক

প্রায় আড়াইশ বছর আগের কথা। স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ লিখেছিলেন,

বাইবেল অব ক্যাপিটালিজম,
দ্য ওয়েলথ অব নেশনস-

এর মতো বই, যা তাকে আধুনিক অর্থনীতির জনক হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

বায়োগ্রাফি ডটকম ওয়েবসাইটে ‘অ্যাডাম স্মিথ বায়োগ্রাফি’ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,স্কটল্যান্ডে তার জন্ম আনুমানিক ১৭২৩ সালে। জন্মের দুই মাস পরেই স্মিথ অনাথ হয়ে যান। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, পণ্ডিত, অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিজ্ঞানী।    


শিক্ষাজীবনে স্মিথ স্কটল্যান্ডে তখনকার বিখ্যাত এক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ল্যাটিন ভাষা, গণিত, ইতিহাস এবং সাহিত্য বিষয়ে পড়েন। আর ১৪ বছর বয়সে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ডে পড়তে যান।  


স্মিথ ১৭৪৮ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বজনীন সিরিজ বক্তৃতা শুরু করেন। এই বক্তৃতার মাধ্যমে, ১৭৫০ সালে তিনি পরিচিত হন এবং বন্ধু হয়ে ওঠেন স্কটল্যান্ডের দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদ ডেভিড হিউমের সঙ্গে। এই সম্পর্ক স্মিথকে ১৭৫১ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিতে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।


অ্যাডাম স্মিথ সমসাময়িক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নয় বছর পরিশ্রমের পর ১৭৭৬ সালে রচনা করেন প্রকৃতি এবং কারণসমূহ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক বই 'ওয়েলথ অব নেশনস'। যেটিকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক অর্থনীতি চর্চায় প্রথম কোনো রচনা হিসেবে।


তাছাড়া ওই সময়, ওয়েলথ অব নেশনসের রচনা স্মিথকে সুদূরপ্রসারী খ্যাতি এনে দেয়। তার রচিত এই বইটি শাস্ত্রীয় অর্থনীতির মূল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি বইয়ের তকমা পায়.


তৎকালীন অর্থনীতি এমন ছিল যে, একটি দেশের জাতীয় সম্পদ পরিমাপ করা হতো দেশে সংরক্ষিত সোনা এবং রূপার ভিত্তিতে। স্মিথ প্রস্তাব করেন, জাতীয় সম্পদকে এভাবে বিচার করা উচিত নয়, বরং একটি দেশের মোট উৎপাদন ও মোট বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত যাকে এখন আমরা জিডিপি বা গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট বলি।  


তিনি শ্রমিকদের অর্থবণ্টন বিভাজন তত্ত্বেরও প্রবক্তা। এর মাধ্যমে বিশেষভাবে গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। 


স্মিথের ধারণা, মূলত শিল্প বিপ্লবের প্রারম্ভের একটি অর্থনৈতিক প্রতিফলন এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতি সমাজের জন্য সবচেয়ে ফলদায়ক এবং উপকারী। স্বতন্ত্র স্বার্থের উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তিনি তার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যা ‘অদৃশ্য হাত’ দিয়ে পরিচালিত হয় এবং সবার জন্য সবচেয়ে ভালো। 


১৭৫৯ সালে স্মিথ রচনা করেন 'দ্যা থিওরি অব মোরাল সেন্টিমেন্টস'। যেটির প্রধান যুক্তি হলো মানব নৈতিকতা ব্যক্তি ও সমাজের অন্য সদস্যদের সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে। এই বই তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌছে দেয়। তিনি ফ্রান্স ভ্রমণের সময় দেখা পান সে সময়ের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন এবং ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ টুরগটের সঙ্গে।  


অর্থনীতির বাইরেও বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন স্মিথ। যার মধ্যে আছে ‘এসে অন ফিলোসোফিক্যাল সাবজেক্ট, হিস্ট্রি অব অ্যাস্ট্রনমি এনসেন্ট ফিজিক্স, মেটাফিজিক্স, লেকচার অন জুরিস প্রুডেন্স, লেকচার অন জাস্টিস, পুলিশ, রেভেনিউ ও আর্মসের মতো বিষয়।


১৭৮৭ সালে স্মিথ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং এর ঠিক তিন বছরের মাথায় ১৭৯০ সালের ১৭ জুলাই ৬৭ বছর বয়সে মারা যান।

No comments:

Post a Comment